Saturday, October 24, 2020

যত দোষ

 এই যে এস এস আর সুইসাইড করেছে আর তাই নিয়ে রিয়া চক্রবর্তী কে সবাই মিলে যাতা হেনস্থা করছে, কেউ কেউ তাতে অবাক। আমি তাদের দেখে অবাক। তাদের জন্যেই দোষের সহজ পাঠ। 

দোষ কীসে হয়? কীসে- সাথে দোষের কোন সম্পর্ক নেই। এই ধরুন এস এস আর মরে গেছে, আর রিয়া চক আর গাঁজা খায়। এর মধ্যে ফালতু লজিক খুঁজলে দোষের মাধূর্যটাই মিস করবেন।


দোষের প্রথম কথা বিদিশার বাবা শিখিয়েছিলেন। কাকু বলতেনদোষ ফেলে রাখতে নেই, দিয়ে দিতে হয়।অর্থাৎ, দোষ নিয়ে কথা বলে লাভ নেই, যদি দোষী না পান। ভাগ্যের দোষ ইত্যাদি বলে ফিলসফাইজ করতে পারেন, কিন্তু দিয়ে সমাজ বা টি আর পি কোনটাই চলেনা। আসল কথা হলদোষ কার?” এইটা জানতে পারলেই বাকি জলবৎ। ইন ফ্যাক্ট দোষ কীসেটা, দোষ কার -এর সাবক্লজ মাত্র।


তাইলে দোষ কার? খুব সহজ, “দোষ আমাদের না।”  আমাদের ছেলেরা রেপ করে না। আমাদের মেয়েরা গাঁজা খায় না। আমাদের পাড়ায় এইসব অসভ্যতা হয় না। আমাদের যা যা হয়, ঘর বাড়ি বংশ পাড়া দল শহর রাজ্য দেশ ভাষা ধর্ম জাত, সব নির্দোষ। তাইলে কার দোষ? ওদের, অফকোর্স। ওরা যারা আমরা নই, যারা আমরা হতে চাইনা, তাদের দোষ। একটাই রুল। ওই যে বলছিলাম দোষ কীসেটা আনিম্পর্ট্যান্ট, কারটাই আসল, এটাও এই নিয়মেই পড়ে। আপনি যদি আমাদের ছেলে হন, তাইলে আপনি খুন করলেও জাস্টিফাইড। আর যদি ফালতু বিধবা টাইপ হন (সংসারে যাদের স্থান বোঝাতে লীলা মজুমদার অমোঘ, "হাফ ঝি হাফ পাপোশ"), তাইলে আপনার একাদশীতে ভাত খাওয়াও দোষের। 


আমরা জিনিসটা আবার বেটার দ্যান ইকুয়াল টু। অর্থাৎ আমার দোষ হয়না ইম্প্লাইজ আমার বাবার দোষ হয়না, গুরুর দোষ হয়না, ব্রিটিশদের দোষ হয়না, এটসেট্রা। 


কটা গল্প বলি। 


প্রথমটা ১৯৮৪ সালের, আমি অনেক পরে শুনেছি যদিও। আমরা তখন সানি প্রিপেরাটরি (পেঁপের তরকারি) স্কুলে নার্সারিতে। একদিন কি কারণে খানিক দোষ পড়েছিল, নেবার লোক নেই। এক বন্ধুকে কেউ একটা জিজ্ঞেস করেছে কার দোষ? উত্তর সন্দীপ আইন। বুঝুন ঠেলা, শুধু যে দোষ আমার নয় তা না, সে তখন আমায় চেনেওনা। অনেকদিন পরে কেন ভাবতে গিয়ে ওর মনে হয়েছিল (গল্পটা ওরই বলা) নামটা ইন্টারেস্টিং বলে। আসলে তা না। নামটা আলাদা। মুখার্জি, ব্যানার্জি, বোস, সেনদের মাঝে আইন। ওই সাড়ে তিনেও আমরা জানি যে দোষ আমাদের না, ওদের। 


পরেরটা অনেকদিন বাদের। এটাও শোনা। তদ্দিনে বড় হয়ে গেছি। মদ, গাঁজা খেতে শিখেছি। তেমনি একটা ঠেকে একটা নতুন ছেলে জুটেছে। আকাট ভালো ছেলে। তার গাঁজা খেয়ে একদম হয়ে গেছে। কোনক্রমে বাড়ি গেছে। সেখানে প্যানিক অ্যাটাক। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে সে বুঝেইছে কিছু নেশা। কিন্তু তারপরেই চাপ, সে ডাক্তারকে যতই বলে যে কি খেয়েছে কোথায় খেয়েছে। ডাক্তার বলে, “না, ওই বাড়ির ছেলেরা তো এসব করবেনা, তুমি মিথ্যে বলছ চাপটা ভাবুন, একে মালটার প্যানিক অ্যাটাক, তারপরে অবিশ্বাস। ছেলেটিও কিন্তু খুবি ভদ্রসভ্য বাড়ির, এখন যে কিছু খেয়েছে, তা নিঃসন্দেহ, কিন্তু তাই বলে দোষ তো আর চারটে ভালো ছেলের হয়না। একটা বস্তিবাড়ির নাম বললেই সমস্যা মিটে যেত। দোষ ঠিক জায়গায় পড়ত। 


আরো? এইটা কদিন আগের। কলকাতায় করোনা কিরম বাড়ছে আলোচনায়, “আর বোলনা। একে তো এত ঝামেলা, তারমধ্যে এই করোনা। মুসলমানদের মধ্যেই বেশি গো, খুব নোংরা তো ওরা


আরো? ইন্ডিয়া এগেন্স্ট কোরাপশন। একটা মুভমেন্ট যার একটাই দাবি, আমরা ছাড়া সবাই চোর।


এবার একটা অ্যাপ্লিকেশন। ধরুন গতবছরআর আমি ডিভোর্স করেছি। ডিভোর্স যে খারাপ তাতো জানেন। দোষটা কার? ভাবতে হচ্ছে? আমি কি আপনাদের ছেলে নই? কিন্তুকে পাচ্ছেন কোথায় যে দোষ দেবেন। সে গুড়ে গ্রিনকার্ড। তাইলে? একটু ছড়িয়ে দিন। আজকালকার মেয়েরা।


রিয়া চকেরটাও। আমাদের ছেলে তো আর সুইসাইড করেনা। তাদের এমনি জীবন তুলসিপাতা। কোথাও একটা মেয়ের দোষ। তারপর সে মেয়ে যদি গাঁজা খায়। ছি ছি।


1 comment:

Arundhati Mukherjee said...

Gabloo,
Guchiye dosh er postmortem korechis.
Ami abar bora bor dosh khaoa ba paoa lok.
Mukhora ebang ashantir karon.
Mota frame er chosma kajei Ragi ebang unapproachable.
Kaj karmo taratari korte bhalobashi tai adhoirjo ebang kinchit alakhkhi.
Raat jege thakar abhyesh...shei abashare cigarette e tan pasher barir kaku majh rate baranda theke dekhe tar kanya k bolte dilo...."akdom mishbi na".


Dosh deoa ta practice kora holo na.🙄