বাচ্চাবেলায় একটা শ্লোক পড়েছিলাম যার শেষটা ছিল “য পশ্যতি স পন্ডিতঃ”। অর্থাত যে দেখে সেই পন্ডিত। খুব মনে ধরেছিল। সেই থেকে আমি মোটামুটি দেখার ধান্দায়। ফলে পন্ডিতিও অনেক জমেছে। ভাবছি বিতরন করি। আপনাদের একটু ফান্ডা দি। কদ্দিনই বা আছি।
প্রথম গল্পটা বলিভিয়ার, ২০১৮ সাল।
কিসের একটা দিন তিনেক ছুটিতে বলিভিয়া গেছি। প্রথম লা পাজ। লা পাজ সম্বন্ধে নানান সাইট থেকে পড়ে জানলাম, যে লা পাজ খুব উঁচুতে। ওখানে গেলে মাথায় অক্সিজেন কম যায়, আর তাতে যা যা হয়, মাথা ধরা থেকে হ্যালুসিনেশন। ফলে সাবধান। আর এত সবাই জানে যে লা পাজে পেলে বলিভিয়া যে কোন টিম কে বলে বলে হারায় (ফুটবলে)। আর কেউ শ্বাসই নিতে পারেনা, খেলবে কি! এইসব ভাবতে ভাবতে নামলাম। এরপরে বাসে চড়ে সিটি সেন্টার যাব।
নেমে থেকেই একটা অদ্ভুত জিনিস দেখলাম। এয়ারপোর্টে, বাসেও। বেশ কিছু লোক, মাথায় একটা পট্টির মত জিনিস পরেছে। এই ইহুদিরা যেমনটা পরে, মাথার সেই জায়গায়। কিন্তু দেখতে অন্যরকম। অনেকটা মাম্পস হলে গালে যেমন পরে, সাদা ফুটোফুটো, ওইরম। বেশিরভাগ মাঝবয়েসি, কয়েকটা ছেলে-ছোকরা।
সেন্ট্রোতে নেমে প্রথম চমক এক যাদুকর। আলাদীনমার্কা সাজ পরে ক্রিস্টাল বলের খেলা দেখাচ্ছেন। সাথে বুমবক্সে বাজছে “জয় জগদীশ হরে”। অনুরাধা পড়য়াল, টী সিরিজ, গুলশন কুমার। ভাবুন। দেখতে দাঁড়ালাম। মন বসলনা। এদিকওদিক সেই পট্টিমাথা লোক অনেক।
কি ব্যাপার? সেই হিচহাইকার্স গাইড টু গ্যালাক্সির শুরুতে ছিলনা? একটা অন্ধ, দুটো অন্ধ। সাত নম্বর অন্ধ দেখে লেখক সবে বাস্তবকে সন্দেহ করতে শুরু করেছেন, দেখলেন সামনে কোথায় অন্ধদের কনভেনশন। এখানে কি পট্টির কনফারেন্স নাকি, ইয়ার্কি হচ্ছে। এদিকে মাথায় অক্সিজেন যাচ্ছে কি যাচ্ছে না। খুব ঘেঁটে গেলাম।
আমার পট্টির সমস্যার অত সহজ উত্তর হলনা। এদিকে স্প্যানিশ বলা লোকেদের এইসব প্রশ্ন করার কোন উপায় নেই। কারণ আপনি যতই “নো হাব্লা এস্প্যানিওল” বলুন (অর্থাত কিনা আমি স্প্যানিশ বলতে পারিনা), তারা এস্প্যানিওলই বলবেন, প্রচন্ড তাড়াতাড়ি বলবেন। আর আপনি যে একটুও বুঝতে পারছেননা তার তোয়াক্কা না করে যতটা বলতে ইচ্ছে ততটাই বলবেন। এই দুহপ্তা আগে মেক্সিকো থেকে ফিরছি। ইমিগ্রেশন অফিসার। সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই হুড়মুড়িয়ে কিসব বলে চল্লেন। আমি বার দুএক “নো হাব্লা এস্প্যানিওল” বলে কোন লাভ হলনা দেখে যা যা লাগে আর কি, পাসপোর্ট, ভিসা, কোভিড টেস্ট রিপোর্ট সব এগিয়ে দিলাম। মহিলা বললেন, “বোলেতো”। আমি আবার “নো হাব্লা এস্প্যানিওল”। কোন বিকার নেই। “বোলেতো?”। এরম খানিক্ষন চলার পরে আমি গুগল ট্রানস্লেট খুলে দেখলাম, “বোলেতো” টিকিট। যেহেতু মোবাইলে, তাই দেওয়া হয়নি। এই পুরো সময় মহিলা একটু ভুরু কুঁচকোন ছাড়া আর কিচ্ছু হেল্প করেননি, শুধু বোলেতো।
ইমিগ্রেশন অফিসার এরম হলে, বাকিরা ভাবুন। ফলে জিজ্ঞেস করার উপায় নেই। একটু বাদেই খেতে যাবার কথা, তাই তখন ওই রইল। রাতে অনেক ভেবেও বিশেষ কিনারা করতে পারলামনা। সবথেকে প্রোবাব্ল মনে হল কোন ধর্মীয় কিছু হবে। খেরেস্তান কাল্ট কোন। কিন্তু ওরম আধুনিক পট্টি? খুঁত থেকেই গেল।
উত্তরটা পেলাম দিন দুই বাদে। একটা গ্রুপের সাথে ঘুরতে গেছি এল অল্টো বলে একটা শহর। জীপ খানিক, তারপর রোপওয়ে। সে দলে অনেক ইংরিজিবলা লোকজন। ফেরার পথে তাদের একজনকে জিগালাম, “আচ্ছা, আমি দুদিন ধরে লা পাজ-এ একগাদা পট্টি মাথা লোক দেখলাম, অথচ এখানে নেই, হ্যালুসিনেশন?” বললেন "না না, তা কেন? তুমি জানোনা?” জানলাম লা পাজ নাকি টাকে চুল ফেরানোর স্বর্গ? কম দামে পুষ্টিকর। সমস্ত দক্ষিন আমেরিকা, এমন কি ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা থেকেও অনেকেই আসে। আর সেই চুল গজানোর অপারেশনের পরে কয়েকদিন এই পট্টি পরে থাকতে হয়। আমি তো থ।
আপনারা জানতেন? তবে!
পরেরবার টাকে চুল গজাতে চাইলে, লা পাজ ঘুরে আসুন। একটু সাবধান হবেন, মাথায় অক্সিজেন কম যায় কিনা। বেশ উঁচুতে।
এইখানে বলে রাখি, এইসব পথে শোনা গল্প উইকিপিডিয়ায় যাচাই করার মত দুর্বুদ্ধি আমার কখনো হয়নি। যেরম মনে আছে বললাম। নেহাত গুল হলে অক্সিজেনের অভাব দায়ি, আমার দোষ নেই।