Saturday, October 24, 2020

হাথরাসে আর আশপাশে

হাথরাসের ঘটনার প্রতিবাদে কোলকাতায় মিছিল বেড়িয়েছে দেখলাম। খুশীর কথা। কিন্তু আমরা আবার বেশি না ভাবি যে এসব দূরের কথা, আমাদের আশপাশটা ভালোই আছে, তাই ভাবলাম কটা কথা লিখে রাখি।

আমার মামি, বাসে ট্রামে হাতে একটা চুলের কাঁটা রাখতেন। যদি কেউ এখানে সেখানে হাত দেয়, তাইলে তার বিঁচিতে কাঁটা বিঁধিয়ে দেওয়াই ওর পছন্দের ডিফেন্স। বলতেন "চিৎকার করতে পারবেনা, বুঝবে ঠ্যালা।এইসব কথা যখন হচ্ছে, তখন আমি ১৪, মামি মধ্য চল্লিশ। 


আরেক বন্ধুর কাছে শুনেছিলাম ধর্মতলায় এক টেলারের কথা, সালোয়ার কামিজ বানান। এই লোকটা প্রতিবার মাপ নেওয়ার সময় প্রতিবার নিপলের উপরে হাত রেখে বুকের মাপ, আর কোমরের মাপটা একটু নীচ দিয়ে। বন্ধু ১০-১১ থেকে ২৩-২৪ অব্দি এর কাছে গেছে, কোনদিন অন্যথা হয়েনি।


এই বন্ধুর সাথে আরেকবার। বাসে। খুব ভিড়। কন্ডাকটার দেখলাম হাতটা উল্টে আছে, আশীর্বাদ-এর মূদ্রা। কেন? যে কজনের বুকে হাত দেওয়া যায় আর কি। দিনের শেষে গুনে রাখে নিশ্চই।


আরেকজন বন্ধু। এই কদিন আগের কথা। সে, তার দিদি আর মা ভিড় রাস্তায়। একজন যাবার পথে তিনজনেরই গায়ে হাত দিয়ে যায়। বন্ধুর বয়েস তখন ১১, দিদির ১৫, মার ৪০। লোকটার আনন্দ ভাবুন, জেনারেশনাল মলেস্টেশন।


নিজের অভিজ্ঞতা। হরিসভার মেলায় ভাইবোনদের সাথে। সখেরবাজার চন্ডীমেলায় বন্ধুদের সাথে। কেউ হেঁটেকেউ সাইকেলে করে। কেউ বুকে কেউ পাছায়, পারলে পায়ের ফাঁকে। চলছে চলবে।


ছোটবেলা থেকে এতগুলো মেয়েকে চিনি। কাউকে চিনি না, যে যথেষ্ট রকম অ্যাবিউস্ড নয়। একজনও না। বাড়িতে (সব থেকে বেশি), অফিসে, রাস্তায়। এরমধ্যে আমার থেকে ১৫-২০ বছর বড় থেকে ২০-২৫ বছর ছোট অব্দি। বেশিরভাগ কলকাতার বা আশেপাশে। শহর যদি এতই ভাল হত, একটা দুটোকে কি আমরা ছেড়ে দিতাম না? আর এতজনকে আবিউস করতে গেলে কত লোক লাগে ভাবুন। আমি আপনি সবাই। লুকোবার উপায় নেই। পিজিয়ন হোল প্রিন্সিপল।   


অবশ্য মন্দের ভাল, এদের এখনো কেউ কেটে ফেলেনি। তার জন্যে আর কদিন বাকি।


বন্ধু পড়ে বললএস ডি ফোর, এস ডি এইট, এস থার্টিওয়ান, সেজো কাকা, দিদির শশুর, অনেক আরো।

যত দোষ

 এই যে এস এস আর সুইসাইড করেছে আর তাই নিয়ে রিয়া চক্রবর্তী কে সবাই মিলে যাতা হেনস্থা করছে, কেউ কেউ তাতে অবাক। আমি তাদের দেখে অবাক। তাদের জন্যেই দোষের সহজ পাঠ। 

দোষ কীসে হয়? কীসে- সাথে দোষের কোন সম্পর্ক নেই। এই ধরুন এস এস আর মরে গেছে, আর রিয়া চক আর গাঁজা খায়। এর মধ্যে ফালতু লজিক খুঁজলে দোষের মাধূর্যটাই মিস করবেন।


দোষের প্রথম কথা বিদিশার বাবা শিখিয়েছিলেন। কাকু বলতেনদোষ ফেলে রাখতে নেই, দিয়ে দিতে হয়।অর্থাৎ, দোষ নিয়ে কথা বলে লাভ নেই, যদি দোষী না পান। ভাগ্যের দোষ ইত্যাদি বলে ফিলসফাইজ করতে পারেন, কিন্তু দিয়ে সমাজ বা টি আর পি কোনটাই চলেনা। আসল কথা হলদোষ কার?” এইটা জানতে পারলেই বাকি জলবৎ। ইন ফ্যাক্ট দোষ কীসেটা, দোষ কার -এর সাবক্লজ মাত্র।


তাইলে দোষ কার? খুব সহজ, “দোষ আমাদের না।”  আমাদের ছেলেরা রেপ করে না। আমাদের মেয়েরা গাঁজা খায় না। আমাদের পাড়ায় এইসব অসভ্যতা হয় না। আমাদের যা যা হয়, ঘর বাড়ি বংশ পাড়া দল শহর রাজ্য দেশ ভাষা ধর্ম জাত, সব নির্দোষ। তাইলে কার দোষ? ওদের, অফকোর্স। ওরা যারা আমরা নই, যারা আমরা হতে চাইনা, তাদের দোষ। একটাই রুল। ওই যে বলছিলাম দোষ কীসেটা আনিম্পর্ট্যান্ট, কারটাই আসল, এটাও এই নিয়মেই পড়ে। আপনি যদি আমাদের ছেলে হন, তাইলে আপনি খুন করলেও জাস্টিফাইড। আর যদি ফালতু বিধবা টাইপ হন (সংসারে যাদের স্থান বোঝাতে লীলা মজুমদার অমোঘ, "হাফ ঝি হাফ পাপোশ"), তাইলে আপনার একাদশীতে ভাত খাওয়াও দোষের। 


আমরা জিনিসটা আবার বেটার দ্যান ইকুয়াল টু। অর্থাৎ আমার দোষ হয়না ইম্প্লাইজ আমার বাবার দোষ হয়না, গুরুর দোষ হয়না, ব্রিটিশদের দোষ হয়না, এটসেট্রা। 


কটা গল্প বলি। 


প্রথমটা ১৯৮৪ সালের, আমি অনেক পরে শুনেছি যদিও। আমরা তখন সানি প্রিপেরাটরি (পেঁপের তরকারি) স্কুলে নার্সারিতে। একদিন কি কারণে খানিক দোষ পড়েছিল, নেবার লোক নেই। এক বন্ধুকে কেউ একটা জিজ্ঞেস করেছে কার দোষ? উত্তর সন্দীপ আইন। বুঝুন ঠেলা, শুধু যে দোষ আমার নয় তা না, সে তখন আমায় চেনেওনা। অনেকদিন পরে কেন ভাবতে গিয়ে ওর মনে হয়েছিল (গল্পটা ওরই বলা) নামটা ইন্টারেস্টিং বলে। আসলে তা না। নামটা আলাদা। মুখার্জি, ব্যানার্জি, বোস, সেনদের মাঝে আইন। ওই সাড়ে তিনেও আমরা জানি যে দোষ আমাদের না, ওদের। 


পরেরটা অনেকদিন বাদের। এটাও শোনা। তদ্দিনে বড় হয়ে গেছি। মদ, গাঁজা খেতে শিখেছি। তেমনি একটা ঠেকে একটা নতুন ছেলে জুটেছে। আকাট ভালো ছেলে। তার গাঁজা খেয়ে একদম হয়ে গেছে। কোনক্রমে বাড়ি গেছে। সেখানে প্যানিক অ্যাটাক। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে সে বুঝেইছে কিছু নেশা। কিন্তু তারপরেই চাপ, সে ডাক্তারকে যতই বলে যে কি খেয়েছে কোথায় খেয়েছে। ডাক্তার বলে, “না, ওই বাড়ির ছেলেরা তো এসব করবেনা, তুমি মিথ্যে বলছ চাপটা ভাবুন, একে মালটার প্যানিক অ্যাটাক, তারপরে অবিশ্বাস। ছেলেটিও কিন্তু খুবি ভদ্রসভ্য বাড়ির, এখন যে কিছু খেয়েছে, তা নিঃসন্দেহ, কিন্তু তাই বলে দোষ তো আর চারটে ভালো ছেলের হয়না। একটা বস্তিবাড়ির নাম বললেই সমস্যা মিটে যেত। দোষ ঠিক জায়গায় পড়ত। 


আরো? এইটা কদিন আগের। কলকাতায় করোনা কিরম বাড়ছে আলোচনায়, “আর বোলনা। একে তো এত ঝামেলা, তারমধ্যে এই করোনা। মুসলমানদের মধ্যেই বেশি গো, খুব নোংরা তো ওরা


আরো? ইন্ডিয়া এগেন্স্ট কোরাপশন। একটা মুভমেন্ট যার একটাই দাবি, আমরা ছাড়া সবাই চোর।


এবার একটা অ্যাপ্লিকেশন। ধরুন গতবছরআর আমি ডিভোর্স করেছি। ডিভোর্স যে খারাপ তাতো জানেন। দোষটা কার? ভাবতে হচ্ছে? আমি কি আপনাদের ছেলে নই? কিন্তুকে পাচ্ছেন কোথায় যে দোষ দেবেন। সে গুড়ে গ্রিনকার্ড। তাইলে? একটু ছড়িয়ে দিন। আজকালকার মেয়েরা।


রিয়া চকেরটাও। আমাদের ছেলে তো আর সুইসাইড করেনা। তাদের এমনি জীবন তুলসিপাতা। কোথাও একটা মেয়ের দোষ। তারপর সে মেয়ে যদি গাঁজা খায়। ছি ছি।


Sunday, October 4, 2020

গ্রীষ্ম বর্ষা শরৎ শীত

ফেলুদাকে আমার পোষায়না। ফেলুদার গল্প পড়তে যে ভয়ানক খারাপ লাগে তা না, এক-আধটা ভালোই, কিন্তু ফেলুদাকে জাস্ট নেয়া যায়না। ছোটবেলায় এটা আমার খুব চাপ লাগত। এই যে সক্কলে ফেলুদার এতো ফ্যান। ছোট-বড় মিলে এত এঞ্জয় করে। আর আমার পড়লেই বিরক্ত লাগে। আমি কি পাগল নাকি! সেই দশের সমস্যা আজ চল্লিশেও রয়ে গেছে। ফেলুদার পপুলারিটি আর আমার বিরক্তি কোনটাই বদলায়নি। তাই ভাবলাম লিখেই ফেলি। আর মার খাবার তো ভয় নেই, বঙ্গজন সুধী, পছন্দ না হলে হয় ভ্রুকুটি নয় চার অক্ষর।

শুরুর আগের কথা। ফেলুদা সাহিত্যের ব্যাপারে আমার কোন বক্তব্য নেই। ওরম ঝকঝকে আনন্দবাজারের ভাষা কমই পড়েছি। আমার চেষ্টা শুধু ফেলুদার চরিত্রহননের। 

ফেলুদা প্রচন্ড প্রিভিলেজেড, প্রচন্ড পাকা, আর গা গুলোনো মধ্যবিত্ত, এক কথায় বালিগঞ্জ। আরো চাপের হল ফেলুদার প্রিচিং। 


এটা নিশ্চই আপনাদের বলতে হবেনা যে বেহালা, বালিগঞ্জ, খিদিরপুর এগুলো সব properties সহজেই টেস্ট করা যায়। যেমন ধরুন ক্যালেন্ডার টেস্ট। কোন বাড়ি বেহালা কি বালিগঞ্জ জানতে হলে খুঁজুন মা কালী- ক্যালেন্ডার, পেলে বেহালা, না পেলে হতেও পারে বালিগঞ্জ। নেক্সট টেস্ট, খুঁজুন রবিগুরুর পোর্ট্রেট কি বাস্ট, নো মা কালী আর ইয়েস রবিগুরু, শিওর বালিগঞ্জ। বাকি attribute গুলো এমনি বসিয়ে নেওয়া যায়, পাঠভবন, সুমন, তন্তুজ, মানিকদা, জর্জদা, ফেলুদা, টিনটিন, গ্লেন ফিডিচ, শান্তিনিকেতনে পৌষমেলা। বেহালার বাড়িতে এর আদ্ধেক কথার মানেও কেউ জানেনা।


ফেলুদা পুরুষ, লম্বা, ফরসা, সুদর্শন, সুগঠন, উচ্চবর্ণ, উচ্চবিত্ত, উচ্চশিক্ষিত। দায়িত্ব নেই কোনরকম (এটা অবশ্য পুরুষমাত্রেই) এমন কি ফেলুদা যে অনাথ, সেটাও অলমোস্ট ওর প্রিভিলেজ। কাকা কাকিমা (কাকিমাটা বোধহয় সিনেমার থেকে ভাবছি, বইতে আছে? ) যে শুধু দামড়া বয়েস অব্দি পোষেন তা নয়, তারা পুরোপুরি in awe! সত্যি বলতে যে কেউ ফেলুদাকে দেখলেই in awe, প্রিভিলেজ চমকায় নিশ্চই চোখেমুখে, নইলে কেন। এবার বঙ্গদেশে যে কটা অনাথ বাচ্চা, এমন কি যে কটা বাচ্চাবুড়ো, তাদের মধ্যে সুবিধের লিস্টে ফেলুদার স্থান কিরম ভাবুন একবার। একি গল্প বাবার ক্ষেত্রেও (ফেলুদার কি মা আছে?), কোন অঙ্কের মাস্টারের এমন দাপট থাকে। কজনের ভাই ভাইয়ের বউ তার ছেলেকে এত তেল দিয়ে পোষে? রেয়ারেস্ট অফ রেয়ার। ফলটাও তেমনি, এই পরিমান সুবিধে পেয়ে যে ফেলুদা মোটামুটি বড়লোকের খিদ্মত্গারি করে দিন কাটান আর ইয়ার্ডলি ল্যাভেন্ডার আর ম্যাগনাম সেন্টের গন্ধবিচার করে বাহবা পান, এতে অবাক কি আর। আম্বানির ছেলে হলে, রোগা হওয়াই জীবনের শ্রেষ্ঠ চ্যালেঞ্জ।


পাকামোর দুটো উদাহরণ দেব, বাকি আপনার দায়িত্ব। এক, প্রদোষ সি মিটার। সিরিয়াসলি? মানে আংরেZ চলে গ্যয়ে ভাই, অনেক দিন। আপনার বাবা না স্বাধীনতা সংগ্রামী? মিত্রকে কেউ মিটার বলেনা, পাগলেও না। ফেলুদার ৩০-৪০ বছর আগে শিব্রাম বরং উল্টো বলে গেছেন, অমর গল্পগ্যাস মিত্রের গ্যাস দেওয়াতে। দুই, কোন গল্প মনে নেই, লালমোহনবাবু ঢুকতেই ফেলুদা শুরু, আপনি এই খেলার এই গ্যালেরির এই কোনে বসেছেন, দুবার বগলে হাত বুলিয়েছেন, আপনার পাশের লোকটা গুটকা খায় আর কানে বিড়ি রাখে, মুসলমান, ইত্যাদি ইত্যাদি। আর সকলে হৈহৈ, "হরি হরি, কি খেল দেখালে গুরু।”  কিন্তু কেন? মানে এই এতগুলো ইন্ফরমেশন ইন্ফার বা ডিডিউস করে (যার নব্বইভাগের হাজারটা অন্য মানে হতে পারে) লাভটা কি হল? লালমোহনবাবুকে জিজ্ঞেস করলেই জানা যেত তো সব। এত কেরদানির দরকার হতনা। কিন্তু কেরদানি না দেখালে ফেলুদার চলবে কেন? আর তো কাজ নেই। যেসব পাকা বাচ্চা বাড়িতে কেউ এলে আবৃত্তি করে শোনায় তার থেকে তফাত নেই কিছু। বাচ্চাগুলো উনতিরিশে এরম করবে না আশা (আমার ছোটবেলায় অবিশ্যি আফ্রিকা পদ্য পড়া কাকুরাও ছিল) ফেলুদার থেকে রেহাই নেই।


প্রসঙ্গত, সিধুজ্যাঠার কথাও ভাবুন। একটা খিটকেল বুড়ো, কাগজ কেটে জমায়, তাও খুনখারাপি রাহাজানির খবর। কি আজব। আপনি আমি হলে পাগলাগারদ, সিধুজ্যাঠা দেবতূল্য। কত পয়সা? খাওয়ায় কে? চাকর বাকর কটা? আর জ্যাঠামোর কথা তো বাদই দিলাম। ফেলুকেও পরীক্ষা দিতে হয়, কে কবে কার ফিঙ্গারপ্রিন্ট, যত ভুলভাল।


কিরম মধ্যবিত্ত? একটাই উদাহরন দেব। ফেলুদার চেহারাটা ভাবুন, ছফিট লম্বা, যোগব্যায়াম করা, ১৫ মিনিটে জুডো কি হক্কাইদো শিক্ষা, মারপিট থেকে হ্যান্ডস্ট্যান্ড সবেতেই তুখোড়। সেই লোকটা ক্রিকেটে কি করে? স্লো অফ ব্রেক। হা ইশ্বর। 


এবার শেষের কথা, ফেলুদার প্রিচিং। আগে ফেলুদা কি নিয়ে কথা বলেনা সেটা দেখি, ফেলুদা গরিব লোকের কথা বলেননা (সোনার কেল্লা বলবেন তো? খালি নামটা দেখুন), মেয়েদের কথা তো নয়ই। ফেলুদার আশ্চর্য বুদ্ধিতে সার্কাসের রোম্যান্টিসিজ্ম ধরা পড়ে, জন্তু-জানোয়ারের কষ্ট, কদাচ না। এদিকে এক্সেন্ট্রিক বড়লোক, ফেলুদার প্রিয় চরিত্র। কি নিয়ে বলেন? অবান্তর বাজে ফান্ডা, যেমন ধরুন অধিকাংশ লোক নাকি থেকে এর মধ্যে সংখ্যা বললে বলে , ১০ এর মধ্যে হলে , আর ফুল গোলাপ। বিবিসির কফি রিসার্চও (যার থেকে আজ জানা যায় কফি খেলে মনোবল বাড়ে। কাল জানা যায়, আসলে মনোবল না, চুলকুনি বাড়ে মাত্র।), এর থেকে scientific কিন্তু ফেলুদা কি বাণী দেন তাই নিয়ে আমার চিন্তা নেই, কিভাবে সেটা নেওয়া হয় তাই নিয়ে অসুবিধে। ধরুন এই যে তোপসে, স্বেন হেদিন থেকে বেগম আখতার পর্যন্ত সব ব্যাপারে ফেলুদার বক্তব্যকে যে আপ্তবাক্য বলে মেনে নেয়, এটা কি ভালো কথা? এই যে কোন প্রশ্ন না করা। ফেলুদা, এবং সেই সূত্রে বালিগঞ্জ আর যতরকম হাফ ইংরেজ ঢ্যামনামোতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে, তোপসে কি কোনদিন ভাববে সার্কাসের জন্তুরা কিরম অত্যাচারিত। কি আমরা মেয়েদের সাথে কেমন ব্যবহার করিফেলুদার শ্রেষ্ঠত্বের স্বতসিদ্ধতা আর তার সুবাদে ফেলুদার কোন কথা বা কাজের বিরুদ্ধতা যে অভাবনীয়, এবং তারই করোলারি হিসেবে যে আমাদের সকলের বালিগঞ্জের আভিজাত্যের জয়জয়কার করা উচিত, এই দাবিটা ফেলুদায় বড্ড। 


রিডেম্পশন? আমার পাঠে লালমোহন বাবুর প্রতি শ্রদ্ধা, দেশি আর্টের প্রতি দরদ, আর সুকুমার রায়। 


শেষের গল্প। ছোটবেলায় বাড়িতে খুব চাপ ছিল, তাই বাইরে বাইরে বেড়াতাম। ক্লাবরুমে টিভিতে খেলা দেখাচ্ছে, ১৯৯১/৯২ ক্রিকেট ওয়ার্ল্ডকাপ, ইন্ডিয়া অস্ট্রেলিয়া। কে একটা ববির কথা বলায় এক মাতব্বর ক্লাবসদস্য বললেন, “আরে ববি রবসন (১৯৯০ এর ফুটবল ওয়ার্ল্ডকাপ মনে করুন), কি ভালো কোচ।আমি ফস করেওটা রবসন না, সিম্পসন, ববি সিম্পসন।কি ভাবছেন? সবাই বাহ বাহ বলল? না। আমার পাকামো অচিরেই শাস্তি পেল। খেলা আর দেখা হল না। ইন্ডিয়া রানে হারল। গুনে দেখলাম, এক পুংলিঙ্গ ছাড়া বাকিগুলো সবইনা” (বেঁটে মোটা কালো গরীব), আমার ভাগ্যে। প্রিভিলেজ speaks, বাকিদের চুপ থাকাই ভাল।