Monday, September 28, 2020

সুচিন্তা


কদিন আগে এক বন্ধুর instagram- একটা মিম দেখলাম। এক সুশ্রী ফিট তরুনী জিম-এর জামাকাপড় পরা, হেঁটে যাচ্ছেন, মুখে মুখোস নেই, পাশে এক প্রচন্ড মোটা মহিলা (আমেরিকান মোটা) হুইলচেয়ারে, মাস্ক পরা। ছবিতে মুখোস পরা মহিলা চোখ বড় করছেন, আর তাই দেখে তরুনী বলছেন, “Are you blaming me?” ইঙ্গিতটা পরিস্কার। আমরা যারা জিমটিম করি, শরীরের যত্ন নিই, যারা কোভিড হলেও টস্কাবোনা সহজে, তাদের সাথে এইসব হেঁজিপেঁজি লোভী মোটা এক্সারসাইজ না করা জনগনের তুলনা হয়ে নাকি! এদের জন্যেই দুনিয়ার এই হাল, ইত্যাদি। 



এখন এই কোভিডের বাজারে মাস্ক না পরা তরুনীকে আপনারা সমর্থন করবেন না জানি, কিন্তু মূল কথাটা প্রায় সবাই মানবেন। শরীর-মন-ত্বকের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন, এবং তাতে যে সমাজ সংসার earth environment democracy সকলেরি প্রভূত মঙ্গল, এটা আজ স্বতসিদ্ধ। মায় আমাদের কলির ত্রাতা মোদি অব্দি বলেছে ফিট ইন্ডিয়া। সক্কলে খুশি। 


এটা ঠিক নয়। 


মানে আপনি হেঁটে, দৌড়ে, জিম হ্যানোত্যানো করে অনবদ্য বডি বানাবেন, আপনার পেটে আট কি ষোল প্যাক হবে, আপনার পুশ-আপের টিকটক ভিডিওতে হাজার খানেক লাইক পড়বে, সব- খুব আনন্দের কথা। কিন্তু তার সাথে সাথে আপনি দেশ কি জগতোদ্ধারের গুস্টিসুখও পাবেন, এইখানেই একটু আপত্তি। সোজাসাপ্টা, আপনার এই হেল্দি লাইফস্টাইলে কারুর কিচ্ছুটি সুবিধে হচ্ছেনা, এমন কি যত মাতাল গেঁজেল পেটমোটা হুমদো লোকজনকে দেখে আপনার হালকা বিবমিষা হয় তাদের তুলনায় দীনদুনিয়ার ক্ষতি আপনি বেশি বই কম করছেন না। এমন কি ফিলসফিকালিও ব্যপারটা বেশ গোলমেলে, এই যে আপনি জিম ইত্যাদি করে নিজে বেশ খুসি হচ্ছেন, এটা অতিভক্ষন বা মাতলামোর থেকে উৎকৃষ্টতর কোন আনন্দ, এইরম ভাববার কোন কারণ নেই। আর সেইটা বলতেই এই লেখা। 


কথা না বাড়িয়ে প্রমান দিই। আপনি মনে করেন রেগুলার ব্যায়াম করা হেল্দি জীবনযাপন ভাল, আর অতিভক্ষন খারাপ। Sorry to say, কিন্তু আপনি অতিভক্ষক। সহজ হিসেব, আপনি এক্সারসাইজ করে ধরুন দিনে ১০০ কিলোক্যালরি খরচা করেন (আপনার ওজন কমছেনা ধরা যাক), সেটা আসে কোথ্বেকে? খাবার। এবার ধরুন, একটা কলা খেয়ে আপনি এই শক্তিটা পেয়েছেন। সেটা না খেলে কি হত? আপনার শক্তি কমত ১০০ কিলোক্যালরি। তা দৌড়বাজিটা না করলেই তো ওই শক্তিটুকু আপনার লাগতোনা? আর কলাটাও খুসিমনে একটা অভুক্ত আফ্রিকান বাচ্চার মুখে যেত? যেহেতু এই কলাটা আপনার ব্যায়ামানন্দ ছাড়া আর কোন কাজে লাগছেনা, সেটা খাবার সাথে দিনে সতেরবার কোল্ডড্রিঙ্কস গেলার পার্থক্য আছে কিছু? মেটিরিয়ালিস্টিকালি তো না বোঝাই যাচ্ছে। আপনার না খাওয়া কলা আর সেই হুমদো মোটা মহিলার ফেলে আসা কোকাকোলার মধ্যে এইটুকুই তফাত যে কোকাকোলাটা আফ্রিকান অভুক্তের পক্ষেও ক্ষতিকর।


এখন আপনি বলবেন যে তাও, দৌড়ে যে এন্ডরফিন স্খরন হয়, তার থেকে যে সুখানুভব, সেটা কখনোই gluttony তুলনীয় নয়। আনন্দ যে হয় তা একদম হক কথা। এন্ডরফিনের জবাব নেই। আমার এক বন্ধুর বন্ধু জানিয়েছেন যে তার দৌড়ের আনন্দ মাচ বেটার দ্যান সেক্স। ইনি ফ্রেঞ্চ। জাতিগত ভাবে সেক্স সম্বন্ধে শেষ কথা। কিন্তু সেটা ভাল আনন্দ ভাবছেন কেন? একটু দূর থেকে ভাবুন। আপনি একটা মাঝবয়েসি লোক। ট্রেডমিলে পাইপাই করে দৌড়োচ্ছেন। দরদর করে ঘামছেন। অথচ কোথাও যাচ্ছেন না, কিছ্ছু প্রডিউস করছেন না। নিজের ঘাম ছাড়া। আল্ফা সেন্টাউরি লোকজন টেলিস্কোপে দেখে আপনাকে পাগল ভাবলে, দোষ দেওয়া যাবে? আর এতে আনন্দের কারণটাই বা কি। কারণ evolution আপনার মাথা মেখে আছে, individual will, rationality অনেক ওপরে। ধরুন আপনি মাইল দুরন্ত দৌড়ে আনন্দে আত্মহারা। আপনাকে আজ দেখলে পাগল মনে হবে ঠিকই, কিন্তু হাজার পঞ্চাশেক বছর আগে এই মাইল আপনাকে বনশুঁয়োরে তাড়িয়ে আনত। আর দৌড়টা শেষ করতে পারলে আপনার খুসি হওয়া স্বাভাবিক, আপনি জীবিত। ঠিক এই আনন্দটাই আজও আপনি পান। সেই বাঁদরের এক্সপেরিমেন্টের মত আপনিও pattern follow করছেন, মূল কারণটা বহুদিন নেই। 


এবার ভাবুন অতিভক্ষনের আনন্দের কথা। কিসের এত খুসি চারটি চিনি খেলে? একি কথা, evolution অতিভক্ষন অতি আধুনিক সমস্যা। ইতিহাস না খেতে পাওয়ার, শক্তির অভাবের। স্বাভাবিক ভাবেই সুগার কি ফ্যাটের মত high energy খাবার পেলে সে চাপ খানিক মেটে, আর তাতেই বুনো মানুষ খুসি। আমাদের কারণ নেই, নেহাত যারা খেতে পায়না, তারা ছাড়া সবাই অনেক খেতে পারি। কিন্তু খুসির ভাবটা যায়নি। তাই বেশি খাই। খুব আলাদা? আপনার ট্রেডমিলের অপচয় থেকে


তাইলে জগতসংসারের ভালো করতে কি করবেন? সহজ, খাবেন কম, যতটা কাজে লাগে। খবরদার দৌড়বেন কি জিম করবেন না। অলস হবেন। আর যদি শরীরচর্চা করতেই চান তো করুন, শুধু হ্যাংলা কি মাতাল কে অচ্ছেদ্দা করবেন না। আপনার থেকে মন্দ না তেমন।