Thursday, May 30, 2024

বিদ্যা দদাতি ঘ্যাম

চন্দ্রিলের ভিডিও  

ঘটনাক্রম 


১। এক্স জি কে একটি প্রশ্ন করেন, যেখানে এক্স মুখ্য চরিত্রের নামের ভুল উচ্চারণ করেন। 

২।  জি এক্স-এর ভুল ধরিয়ে দেন, এবং শুদ্ধ উচ্চারণটা দেখিয়ে দেন (প্রশ্নের উত্তর দেন না।

৩। এক্স উচ্চারণের ভুলটাকে তুচ্ছ বিষয় বলে, আবার প্রশ্নটি করেন এবং এবারও ভুল উচ্চারণ করেন। 

৪। জি বিরক্তি প্রকাশ করেন এবং আবার উচ্চারণটা শুধরে দেন। 

৫। সঞ্চালক অন্য প্রশ্নকারীদের সুযোগ দেন, এক্স উত্তর পান না। 



চন্দ্রিল বলেছেন যে, / হয়ত জি না করলেও পারতেন, কিন্তু / গিয়ে এক্স যদিঅশিক্ষার অহংকারনা দেখিয়ে উচ্চারণটা শুধরে নিতেন, সরি বলতেন, তাইলেই ল্যাঠা চুকে যেত। একটা শিক্ষাস্থলে এরম অশিক্ষার ঔদ্ধত্য মানায়না, তাতে জি যদি একটু বিরক্তি প্রকাশ করেন সেটা তেমন খারাপ কিছু না। 


তারপরে এক্স দলিত কিনা, সাব-অল্টার্ন কিনা, ইত্যাদি নিয়ে অনেক প্যাঁচাল। বিশেষত জি বিখ্যাত পোস্ট- মডার্ন /কলোনিয়াল তাত্ত্বিক (এবং ব্যবহারিক), ফলে খানিক জলঘোলা হয়েছে। 


বক্তব্য


চন্দ্রিল ভুল। ৩। এক্স-এর ভুল স্বীকার করার প্রশ্ন ওঠে না, কারণ এক্স বলেছেন যে উচ্চারণের ভুল এক্ষেত্রে একটা তুচ্ছ বিষয়। এটা অশিক্ষার অহংকার নয়, বরং একটা ইন্টেলেকচুয়াল পজিশন। জি (বা চন্দ্রিল) তা নিয়ে তর্ক করতে পারতেন (উচ্চারণের গুরুত্ব), বা এই তর্ক সরিয়ে রেখে মূল প্রশ্নে যেতে পারতেন। কোনটাই না করে, দ্বিতীয়বার ভুল শুধরে দেওয়া, বিরক্তি প্রকাশ এবং অন্য প্রশ্নে চলে যাওয়া - সবকটাই এক্সের চিন্তার অবমাননা। তার প্রশ্ন এবং বক্তব্য উভয়কেই উপেক্ষা করা হল, কারণ জি মনে করেন উচ্চারণ বিশুদ্ধির গুরুত্ব অসীম।


উচ্চারণ দক্ষতার সাথে শিক্ষাকে ইকুয়েট করার কলোনিয়াল ইতিহাস তো আছেই, তা বাদ দিলেও জির বক্তব্য যে নড়বড়ে তার উল্লেখ চন্দ্রিলও করেছেন, কবিতার মান আর তার বানানশুদ্ধির কোরিলেশনের গল্প বলে। কিন্তু তারপর নিজের যুক্তি নিজেই কাটিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধায়। কারণ ভুল উচ্চারণের তুলনায় ঠিক উচ্চারণ ভালো, শিক্ষা অপেক্ষা অশিক্ষা। তাই এক্সের বাকি কথা না শুনলেও চলে। 


জি- অমোঘ প্রশ্ন “Can the subaltern speak?” ঘুরিয়ে যদি বলি যে যার কথা শোনা হল না, তাকে কি সাব-অলটার্ন বলা যায়? তাইলে বোধহয় উত্তর হ্যাঁ হবে, এক্স যেখানেই পড়ুন আর দলিত হোক বা ব্রাহ্মণ। 


বক্তব্য  


অশিক্ষার তুলনায় শিক্ষা কত ভালো তা বিচারের আগে, এখানে শিক্ষার ব্যবহারটা লক্ষণীয়। একেবারে ফুকো-অনুসারে, শিক্ষার প্রয়োজন এখানে অশিক্ষিতকে চিহ্নিত করতে, তাকে উপেক্ষা এবং অপমান করতে। চন্দ্রিলও দাবি করছেন এক্স ভুল মেনে নিলেই পারতেন, বিনয়াবনত হওয়াই অশিক্ষিতকে মানায়। একি প্রশ্ন উনি জি কে করেননি, কারণ পণ্ডিত বা পণ্ডিতম্মন্যর দুর্বিনীত হওয়াই বিধান। বিদ্যা দদাতি বিনয়ং না, বরং বিনয় আগে।  বিদ্বানের ক্ষমতাকে যথোচিত সম্মান দেখিয়ে তবে না শিক্ষার সুযোগ। পাওয়ার ইকুয়েশনটা যেখানে এমন ঘাঁটা, অশিক্ষার অহংকার সেখানে প্রতিবাদের উপায়- বটে। চন্দ্রিল যাই বলুন, এক্স বেশ করেছেন। এমন শিক্ষিতের ঝাঁট জ্বালানো অতি পূণ্যের কাজ। 


শেষে চন্দ্রিল ঠাট্টা করে বলেছেন, যদি কেউ বলেন যে সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা দেখে কোলকাতা হিলে গেছিল (কেঁপে না গিয়ে) বা রবীন্দ্রনাথ কাঠুরের কবিতা (দারুণ বর্ণ বিপর্যাস), তাকে কি আমরা সিরিয়াসলি নিতে পারি? নিতে পারিনা কারণ আমরা (কোলকাতার উচ্চমধ্য) হিন্দিকে নিচু চোখে দেখি, খোট্টারা বলে। একই প্রশ্নে যদি বলতাম, কোলকাতা was shaken, তাইলে অশিক্ষার প্রশ্ন উঠত না। রবি কাঠুরের জায়গায় রবি টেগোর বললেই আমরা সিরিয়াসলি নিতে বাধ্য হতাম, রাজার ভাষা কিনা।